এক নজরে ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা


দুই হাজার পনের সাল নাগাদ ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা ও আবাসন ব্যবস্থা কেমন হবে, সেই সম্ভাব্য অবস্থার ভিত্তিতে শুরু করা হয়েছিল বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা তৈরির কাজ। ইংরেজিতে ডিটেলড এরিয়া প্লান, সংক্ষেপে ‘ড্যাপ’। পরিকল্পনাটির কাজ হাতে নেয়া হয় দুই হাজার চার সালে। দুই হাজার আট সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হওয়ার কথা। এখন দুই হাজার দশ সাল পার হয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পনাটা বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সাত মন্ত্রণালয়ের আগ্রহের আর কাজের ধরন দেখে বলা যায়; এ বছরও বাস্তবায়নে হাত দিতে পারবে না কর্তৃপক্ষ। সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ইতিমধ্যেই বলেছেন যে, পৃথিবীতে চূড়ান্ত বলে কিছু নাই। অর্থাৎ সরকারি প্রজ্ঞাপন আকারে চূড়ান্ত হয়ে চূড়ান্ত হল না ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা। কি আছে এই শেষ হয়েও শেষ না হওয়া পরিকল্পনাটিতে? সে নিয়েই এই চিন্তা প্রতিবেদন

পরিকল্পনার সারসংক্ষেপ

পরিকল্পনা’র উদ্দেশ্য

এক. ঢাকা মহানগরের উন্নয়ন হবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মোতাবেক। শহর অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ভিত্তি করে নেয়া হয় এই পরিকল্পনা।

দুই. পরিকল্পিত এলাকার মৌজার মানচিত্রে ভূমি ব্যবহার সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে দেয়া। অর্থাৎ আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা, রাস্তাঘাট, কৃষি ও বন্যা প্রবাহ অঞ্চল, খোলা জায়গা, খেলার মাঠ, পার্ক, প্রাকৃতিক জলাধার এবং ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনার ব্যাপারে সঠিক নির্দেশনা দেয়া।

তিন. যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে বিনোয়োগের নির্দেশনা দেয়া।

চার. প্রকল্প বাস্তবায়নে বিধি-বিধান ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ঠিক করে দেয়া।

পাঁচ. বিনোয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা। অর্থাৎ অধিবাসী ও বিনোয়োগকারীরা নিরাপদে বিনোয়োগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা।

আওতাভূক্ত এলাকা

১. গাজীপুর পৌরসভা থেকে উত্তরে।

২. ধলেশ্বরী নদী থেকে দক্ষিণে।

৩. বংশাই এবং ধলেশ্বরী নদী থেকে পশ্চিমে।

৪. শীতলক্ষা এবং মেঘনা নদী থেকে পূর্বে।

পরিকল্পনাভূক্ত এলাকাগুলাকে এ, বি, সি, ডি, ই--এই পাঁচটা গ্রুপে ভাগ করা হয়। গ্র“প ‘এ’ তে আঠারটা ইউনিয়ন এবং তিনটা পৌরসভা। ‘বি’ তে তিনটা পৌরসভা এবং একুশটা ইউনিয়ন। গ্র“প ‘সি’ তে বারটা থানা। ‘ডি’ তে পনেরটা মৌজা। এবং গ্র“প ‘ই’ তেও পনেরটা মৌজা আছে। এছাড়া মৌজা আকারে আরও কিছু এলাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার আওতায় পড়েছে।

পরিকল্পনা প্রণয়ন পর্ষদ

পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে তৈরি করতে তিনটি পর্ষদ গঠন করা হয়। পর্ষদ গঠন করা হয় টার্মস অফ রেফারেন্স (টিওআর) অনুসারে। এক. কৌশলগত ব্যবস্থাপনা পর্ষদ। এ পর্ষদের সদস্য সংখ্যা একচল্লিশজন। দুই. কৌশলগত ব্যবস্থাপনা উপ-পর্ষদ। এগারোজন সদস্য নিয়ে পর্ষদ গঠন করা হয়। তিন. আন্তঃমন্ত্রণালয় সি। বাইশ সদস্য নিয়া গঠন করা হয় এই আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্ষদ।

প্রকল্প অঞ্চলে জনসংখ্যা

দুই হাজার এক সালের আদমশুমারি মোতাবেক বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় লোক সংখ্যা এককোটি চব্বিশ লাখ। এই জনসংখ্যাকে হিসাব ধরে দুই হাজার পনের সাল নাগাদ ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা কি পরিমাণ হবে সেটা মাথায় নিয়ে পরিকল্পনাটি নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে জনসংখ্যা বাড়ার হার ভিন্ন ভিন্ন। তবে এ পরিকল্পনায় জনসংখ্যার বাড়ার হার ধরা হয়েছে ৪.২৯ শতাংশ। তাতে দ্ইু হাজার পনের সাল নাগাদ ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা হবে এককোটি তেতাল্লিশ লাখ।

পরিকল্পিত শহরে ভূমির ব্যবহার যেমন হবে

ড্যাপে ভূমি ব্যবহার নীতিমালা করা হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমির অবস্থান ও ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী। পরিকল্পনাবিদরা ড্যাপে সতের প্রকার ভূমি ব্যবহারের কথা বলেছে। এ অঞ্চলের ভূমি উন্নয়ন এই নীতিমালা অনুসারে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ সতের প্রকারের বাইরে আরো তিনটা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। সেগুলা হল, অপরিবর্তনযোগ্য অঞ্চল (ওভার লে জোন), নন-কমফর্মিং জোন এবং নতুন ব্যবহার (নিউ ইউজ)। ওভার লে জোন হল, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার কাজ শুরুর বহু আগে যে ভূমি ব্যবহার হয়ে গেছে। এখন ইচ্ছা করলেও যা পরিবর্তন করা যাবে না। কারণ এটা পরিবর্তন করতে গেলে অনেক জটিলতা দেখা দেবে। যারা এ ভূমি ব্যবহার করেছে তারা জানত না যে, অদূর ভবিষ্যতে ঢাকায় একটা পরিকল্পনা হতে যাচ্ছে। তাই এরকম ব্যবহার হয়ে যাওয়া জমিকে অপরিবর্তনযোগ্য অঞ্চল বা ওভার লে জোন হিশাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। পুনরুদ্ধারযোগ্য অঞ্চল বা নন-কমফর্মিং জোন বলতে বিশেষত বন্যা প্রবাহ অঞ্চল ও জলাধারকে বুঝানো হয়েছে। তবে এসব অঞ্চলও ব্যবহার হয়ে গেছে। কিন্তু পরিবেশ-প্রকৃতি বাঁচানোর স্বার্থে এধরনের ভূমি আগে থেকে ব্যবহার হয়ে যাওয়ার পরও কোন ছাড় দেয়া যাবে না। বন্যা প্রবাহ অঞ্চল বা জলাধার হিশাবে তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ এসব অঞ্চল কেউ ব্যবহার করলেও তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করে নিতে হবে। এবং জলাধার ও বন্যা প্রবাহ অঞ্চলের ভূমি হিশাবে কাজে লাগাতে হবে। ফলে আবাসন ব্যবসায়ী সহ যারাই এখন এসব অঞ্চল বৈধ বা অবৈধ যে কোনভাবেই ব্যবহার করছে তাদের কাছ থেকে তা উদ্ধার করা কর্তৃপক্ষের আইনি কর্তব্য।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে রাস্তার পালাক্রম (হায়ারারকি) বজায় রাখা হয়েছে। প্রস্তাবে সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে জাতীয় সড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, সংযোগ সড়ক, স্থানীয় সংযোগ সড়ক চিহ্নিত করে দেয়া আছে। সরকার যে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) নিয়েছে সেটাকে অনুমোদন করা হয়েছে এই প্রস্তাবে। এছাড়াও একাধিক সংযোগ নির্মাণ ও যেখানে সড়ক নাই, সেইসব জায়গায় সড়ক নির্মাণেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকার চারপাশে নৌচলাচলের জন্য নদীপথের সকল বাধা দূর করা সহ নতুন নতুন নৌযান চালু করার প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনাটিতে।

রাস্তা হবে চওড়া

বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় চওড়া রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। রাস্তাগুলা হবে জালের মত ছড়ানো। আসল কথা হল, ড্যাপের রাস্তা নির্মাণ করা হবে গাড়িকে প্রাধান্য দিয়ে। কিন্তু তাতে মানুষের হাঁটার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে নাগরিকদের ভেতওে মোটরগাড়ি কেনার ঝেঁক-প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে। একশ থেকে একশ সত্তর ফুট রাস্তায় দশ থেকে ষোলটা লেন থাকবে। রাস্তা নির্মাণের প্রকৌশলীরা চওড়া, সোজা এবং দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচলের কথা মাথায় রেখে নকশা করেছেন। পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ মাহবুবুল বারী এরকম রাস্তা নির্মাণের সমালোচনা করে বলেছেন, যাতে লোকজন এক দুয়ার থেকে আরেক দুয়ারে যত সহজে যোগাযোগ করতে পারে এবং এরসাথে বাজার, অফিস-আদালতে মানুষ যাতে সহজে ঢুকতে পারে, সে দিকে খেয়াল করেই রাস্তার নকশা করতে হবে।

সংরক্ষিত এলাকা

সংরক্ষিত এলাকা বলতে সাধারণ জনগণের ব্যক্তিগত ব্যবহারের অধিকার নাই সরকার নির্ধারিত এমন এলাকা বুঝায়। পরিকল্পনাটিতে এর জন্য রাখা হয়েছে দুই হাজার ছয়শ ছিয়াত্তর একর জমি। এই জমির পরিমাণ মূল ঢাকার শহরের দশ ভাগের এক ভাগ। কেন্দ্রীয় হাজতখানা, আনসার হেডকোয়ার্টার, বিডিআর হেডকোয়ার্টার, পুরাতন বিমানবন্দর, এবং বনানী, গুলশান, বারিধারা ও মিরপুরে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য সংরক্ষণে রাখা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলা ঢাকার বর্তমান এলাকা থেকে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার ভেতরে স্থানান্তর করা হবে। এতে ধারণা করা হয় ঢাকা শহরের ওপর অতিরিক্ত চাপ কিছুটা হলেও কমে যাবে।

জনদরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান

প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা শহর থেকে সরিয়ে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ রয়েছে। ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা থেকে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্কুল সরিয়ে নেয়ারও প্রস্তাব আছে পরিকল্পনাটিতে। নগর পরিকল্পনাবিদরা এ ব্যাপারে ভিন্ন মত জানিয়ে বলেছেন, পরিকল্পনায় এসবের সরানোর কথা বলা হয়েছে বটে, কিন্তু নগরবাসীর দুর্ভোগ তাতে কমবে না। কারণ, পরিকল্পনায় সামগ্রিকভাবে যাতায়াতের মাত্রা এবং পরিমাণকে আরো বাড়িয়ে তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেকোনো আবাসিক এলাকার স্বাভাবিক চাহিদা হিসাবে প্রয়োজনীয় যে সেবা-প্রতিষ্ঠানগুলা তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে তা সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ নাগরিক অবকাঠামো ও চলাচলের মাধ্যমগুলার সার্বিক কাঠামো ও প্রক্রিয়া এমনভাবে গড়ে তোলা হবে যাতে কেউ ইচ্ছা করলে বাসা থেকে হেঁটে স্কুলেও যেতে পারবে না। এমনকি তরকারি কিনতেও বাস ভাড়া দিয়ে বাজারে যেতে হবে। সবমিলিয়ে দেখা যাবে, চলাচলের মাত্রার সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাচ্ছে। তাই পরিকল্পনায় পরিবহন ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত নাগরিক অবকাঠামোর এমন অবস্থা দুর্ভোগ বাড়াবে তাতে সন্দেহ নাই।

আবাসন

ঢাকা শহরে প্রতি একরে আটশ লোক বাস করে। পুরান ঢাকায় বাস করে তিন হাজার সাতশ বিয়াল্লিশ জন। গুলশান বারিধারায় একর প্রতি জনবসতি দুইশ পঁয়ত্রিশ জন করে। ঢাকার বর্তমান মূল এলাকার বাইরে একাশি হাজার পাঁচশ ছিয়াশি একর জমি আবাসিক এলাকার জন্য শনাক্ত করা হয়েছে। ড্যাপের প্রস্তাবনা অনুসারে এটা হবে গুলশান, বনানী ও বারিধারার মত আবাসিক এলাকা নির্মাণের প্রস্তুতি। দুই হাজার পনের সালের মধ্যে শোয়া কোটির বেশি লোক বাস করবে ঢাকায়। তাতে ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে মূল ঢাকায় একর প্রতি লোক বাস করবে একশ আটান্ন জন। কিন্তু দুই হাজার পনের সালের মধ্যে ঢাকায় যে হারে ক্রমশ জনবসতি বাড়ছে এতে তাদের আবাসন সমস্যার সমাধান কতখানি সম্ভব হবে--এটা পরিকল্পনাটিতে পরিষ্কার না। অপরদিকে পরিকল্পনাটিতে ঢাকা মহানগরের এখনকার অধিবাসীদের যে পরিসংখ্যান দেখানো হয়েছে সেটা আদৌ সঠিক কোন পরিসংখ্যান কিনা তাও স্পষ্ট না।

কম আয়ের লোকেদের জন্য

কম আয়ের লোকদের শহরের আশপাশে বা ভেতরে বস্তিতে থাকতে হয়। কাজের জায়গা থেকে থাকার স্থান খুব দূরে হলে নিয়মিত কাজে যোগদানে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। এই পরিকল্পনায় কম আয়ের ৪২ থেকে ৪৫ লাখ লোকের আবাসন বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে। কম আয়ের লোকেরা এগুলা কিনবে অথবা ইজারায় নিতে পারবে। উনিশশ ছিয়ানব্বই সালের জরিপ অনুসারে ঢাকা শহরে চল্লিশ শতাংশ লোক বস্তিতে বসবাস করছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাজার দরে কিছু জমি কিনে পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা, সবুজায়ন ও ইকো-পার্ক নির্মাণ করবে। বলা হয়, এখান থেকে শহরের বসবাসরত গরিব লোকদেরও কিছুটা আবাসন সুবিধা দেবে। অর্থাৎ গরিবরা এখান থেকে জমি কিনতে বা ইজারা নিতে পারবে। ঢাকার উত্তর-পশ্চিম পাশের নিচু এলাকা ও উত্তর দিকে ভাসানটেক, মানিকদি, ভোলারঘাট, বাউনিয়া ও খালসি ইত্যাদি এলাকায় জমি কেনা কিংবা ইজারা নেয়ার এ প্রস্তাব করা হয়েছে।

কৃষি জমি

একটা টেকসই নগর পরিকল্পনা করতে কৃষিজমির প্রতি একটু বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। সবকিছু নগরে পরিণত হলে মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। তখন অন্য দেশের দ্বারস্থ হতে হবে। ড্যাপে ২৭.২৭ শতাংশ কৃষি জমি হিশাবে রাখা হয়েছে। দুই প্রকারের কৃষি জমির কথা বলা আছে। এক. উচ্চফলনশীল কৃষি জমি। দুই. সাধারণ কৃষি জমি। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় ঢাকার বাইরে ১২২১২৮ একর জমির প্রায় অর্ধেকই রাখা হয়েছে আবাসিক এলাকার জন্য। পরিকল্পনাটির পুরা চিত্র অনুসারে দেখা যায়, কৃষি জমির পরিমাণ খুবই কম। অর্থাৎ পরিকল্পনাটি কৃষি জমিতে খুবই কম গুরুত্ব দিয়েছে।

বন্যা প্রবাহ অঞ্চল

ঢাকা শহরের প্রায় চারপাশেই নদী আছে। তাই বর্ষায় নদীর অতিরিক্ত পানি উপচে শহরের ভেতরে চলে আসে। বন্যায় শহর ডুবে যাওয়ার সবরকম হুমকি বিদ্যমান আছে। উনিশশ আটানব্বই সালের বন্যা স্থায়ী হয়েছিল সত্তর দিনের মত। এ অবস্থায় পরিকল্পনাটিতে বন্যা প্রবাহ অঞ্চল দুইটা অংশে ভাগ করা হয়েছে। এক. প্রধান বন্যা প্রবাহ অঞ্চল। দুই. উপ-বন্যা প্রবাহ অঞ্চল। মোট বন্যা প্রবাহ অঞ্চল রাখা হয়েছে ২৪.০৭ শতাংশ। কিন্তু ইতিমধ্যে আবাসন ব্যবসায়ীরা এগুলা ভরাট করে প্লট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

জলাভূমি ও জলাধার

পানি নিষ্কাশন ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে ড্যাপে কমপক্ষে ১.৭৫ শতাংশ জলাভূমি ও ৭.৪৮ শতাংশ জলাশয় রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে এ অঞ্চলে জলাভূমির পরিমাণ ০.০২ শতাংশ। মৌজা মানচিত্রের ভেতরে যেসব খাল এখনো টিকে আছে, সেগুলা সহ অন্যান্য খালগুলা শনাক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে খালের মধ্যে সংযোগের মাধ্যমে আন্তঃসংযোগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আছে। সংযোগ খাল, পানি শোধনাগার, ও বর্জ্য নিষ্কাশনের জায়গাও শনাক্ত করা হয়েছে। তবে পরিকল্পনা করা হয়েছে পুরাপুরি বাঁধ নির্ভর। বালু নদীর পশ্চিমতীরে বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু বাঁধ নির্মাণ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা হলে পরবর্তীতে তা ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে আসে। এর পরিণতি কতটুকু খারাপ হয়--ঢাকার পঞ্চিমাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণের ফলে তার করুণ অবস্থা স্বচক্ষেই দেখতে পাচ্ছি আমরা। প্রতিবছর ওই এলাকাগুলাতে বর্ষায় বাসাবাড়ির দুইতলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়। তাছাড়া বাঁধের কারণে বন্যা যদি শহরে ঢুকতে না পারে, তবে তা অন্য অঞ্চলে গিয়ে ঢুকবে। সেখানে সৃষ্টি করবে মারাত্মক বিপর্যয়।

পার্ক ও খোলা জায়গা

পার্ক ও খোলা জায়গাকে বলা হয় নগরীর বারান্দা। একটা পরিকল্পিত নগর এই বারান্দা ছাড়া হয় না। যেমন কেউ একটা ঘর বানালে তাতে একটা সুন্দর বারান্দা রাখতে হয়। নাগরিকদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে শহরে পর্যাপ্ত পার্ক ও খোলা জায়গা রাখতে হয়। সে অনুসারে ঢাকা শহরে পার্কের সংখ্যা খুব কম। পর্যাপ্ত তো নয়ই। মাত্র ০.৯৪ শতাংশ খোলা জায়গা রাখা হয়েছে এই পরিকল্পনায়। অথচ পরিকল্পনাটির উদ্দেশ্যই হল, ঢাকাকে একটা বাসযোগ্য ও পরিবেশ সম্মত নগর হিশাবে গড়ে তোলা। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যই তাতে পুরাপুরি অনুসরণ করা হয় নাই।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।