হক-কথা’র পাতা থেকে


ফারাক্কা মিছিল এগিয়ে চলুক

লংমার্চের পরের সপ্তাহে প্রকাশিত হক-কথা’র ২৪ মে ১৯৭৬’র সংখ্যায় লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। চিন্তা’র পাঠকের জন্য এটি আমরা হুবহু তুলে দিলাম।-সম্পাদক

সকল জল্পনা কল্পনা আশঙ্কা উদ্বেগের অবসান ঘটিয়ে ফারাক্কা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে মহাসমারোহে; সমাপ্ত হয়েছে অভাবিত সাফল্যে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছে এক নতুন অধ্যায়। দল নয়, ব্যক্তি নয়, দেশ ও জাতিই আজ নেতৃত্বের আসনে। ঐক্যই আজ একমাত্র শ্লোগান। শতাব্দীর বার্ধক্য ও জরা উপেক্ষা করে মরণপণ মার্চারদের পয়লা কাতারে দাঁড়িয়ে মওলানা ভাসানী প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ অজেয়-অকুতোভয়। তারা ভাঙ্গবে-তবু নুইবে না। আজ তাই সাবধান হবার সময় এসেছে, একথা অনুধাবন করার যে একটি জাগ্রত জাতিকে দমিয়ে রাখবে এমন শক্তি কারো নেই। ফারাক্কা মিছিল দেশে বিদেশে জাগিয়েছে বিরাট আলোড়ন।

দুঃখ হয়--“পৃথিবী বৃহত্তম গণতন্ত্র” স্বদেশে গণতন্ত্রের ধ্বংস স্তুপে লাঠির শাসন চালিয়ে বাহিরেও চোখ রাঙ্গানী ও ধাক্কাধাক্কি শুরু করেছে। এ মেটামরফসিস সত্যিই দুঃখজনক। বাংলাদেশের আট কোটি মানুষের প্রতি ইন্দিরা সরকার এবং এক শ্রেণীর ভারতীয় পত্রপত্রিকা যে অসহিষ্ণু মনোবৃত্তির পরিচয় দিয়েছে তা বাস্তবিকই ন্যাক্কারজনক। ভারত সরকারের যুদ্ধংদেহী পাঁয়তারা, পত্রিকাগুলোর সাজ সাজ রব দুনিয়ার মানুষকে বিস্মিত করেছে--বিশ্ব বিবেককে করেছে হতবাক।

ইস্তাম্বুলের বিশ্বমুসলিম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে ফারাক্কা প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ও সহানুভূতি প্রদর্শন করে প্রজ্ঞা ও জাগ্রত বিবেকবোধের পরিচয় দিয়েছে। আমরা তজ্জন্য কৃতজ্ঞ। ইসলামী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে ব্যক্তিগত ভাবে যোগদান সম্পর্কে জেনারেল জিয়াউর রহমানের সময়োচিত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ বিশ্ব মুসলিম সংহতি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা করেছে। বাংলাদেশের আট কোটি মানুষের সাথে সাথে আমরাও আশা করবো এ সংহতি ও সহযোগিতা ফলপ্রসু হবে--সংশ্লিষ্ট দেশসমূহ তথা তৃতীয় বিশ্বের মানুষের জীবনে নতুন আশা উদ্দীপনার সঞ্চার করবে।

ফারাক্কা মিছিলের সফল সমাপ্তির পর আজকের করণীয় সম্পর্কে ভাবার সময় এসেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ফারাক্কা মিছিলের প্রোগ্রাম ঘোষণা করার শুরুতেই বলেছিলেন এ মিছিল জাতীয় জাগরণ ও জাতীয় ঐক্যের সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সংহত করার সংগ্রামের প্রতীক। তিনি আরো ঘোষণা করেন যে, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ এবং তাদের এজেন্টদের আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা, দুর্নীতি, রাহাজানী, লুট, হাইজ্যাক প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে দলমত জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশী জাতিগঠনমূলক কর্মপ্রয়াসে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে এক লাখ স্বেচ্ছসেবী নিয়ে এক দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তাই আজ প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের পবিত্র কর্তব্য হচ্ছে, সকল বিভেদ সকল জড়তা ঝেড়ে ফেলে মওলানা ভাসানীর ফারাক্কা আন্দোলন, দুর্নীতি ও দুস্কৃতি প্রতিরোধ আন্দোলন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আন্দোলনে শরীক হওয়া। তাহলে বাংলাদেশের আকাশ অচিরেই মেঘমুক্ত হবে--ইনশাল্লাহ।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।